About Course
ইস্তিহসান কী?
ইস্তিহসান শব্দটি আরবি ভাষার “حُسْن” (হুসন) থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ সুন্দর বা উত্তম। ইসলামি ফিকহে ইস্তিহসান বলতে বোঝায়, সাধারণত প্রচলিত আইনগত নিয়ম থেকে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এমন কোনো সমাধান গ্রহণ করা, যা বিশেষ পরিস্থিতিতে আরও উপযুক্ত, সুবিধাজনক এবং ন্যায্য বলে মনে হয়। এটি এক ধরনের আইনি ব্যতিক্রম যা সাধারণত কিয়াস (তুলনামূলক বিচার) বা প্রচলিত নিয়মের ওপর ভিত্তি করে গৃহীত হয়।
ইস্তিহসানের মূল বৈশিষ্ট্য:
উত্তম সমাধান খোঁজা: এমন সমাধান গ্রহণ করা, যা মানুষের কল্যাণে বেশি উপকারী।
ব্যতিক্রম প্রয়োগ: প্রয়োজন বা জরুরতের কারণে একটি সাধারণ বিধান থেকে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ন্যায্যতা ও উপযোগিতা: বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যায্যতার ভারসাম্য বজায় রাখা।
ইমাম আবু হানিফার কাছে ইস্তিহসানের গুরুত্ব
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ইস্তিহসানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিকহি পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেন। এর কারণ:
মানবিক প্রয়োজন মেটানো: বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে কিয়াস বা সাধারণ নিয়ম সবসময় উপযুক্ত নাও হতে পারে। ইস্তিহসান ব্যবহার করে তিনি এমন সমাধান দিয়েছেন, যা মানবিক প্রয়োজন এবং কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়েছে।
জটিল সমস্যার সমাধান: কিছু সমস্যা ছিল এমন, যেখানে কিয়াসের সিদ্ধান্ত কঠোর বা অযৌক্তিক মনে হতো। ইস্তিহসান প্রয়োগ করে তিনি সেই সমস্যার ন্যায্য ও বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করতেন।
ফিকহের নমনীয়তা: ইস্তিহসান ইসলামী আইনকে নমনীয় করেছে, যাতে এটি বিভিন্ন সময় ও সমাজের প্রয়োজনে খাপ খাইয়ে চলতে পারে।
কুরআন ও সুন্নাহর রুচি: ইমাম আবু হানিফা ইস্তিহসানকে কুরআন ও সুন্নাহর মূলনীতি ও মাকাসিদ (উদ্দেশ্য) এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর মতে, ইসলামের প্রকৃত চেতনা ন্যায়বিচার, সহজতা, ও কল্যাণে নিহিত, এবং ইস্তিহসান এ উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক।
উদাহরণ:
একটি উদাহরণ হলো: যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নদীর পাশে বাস করে এবং সেই নদী থেকেই সে তার জমিতে পানি নেয়, তবে সাধারণ কিয়াস অনুযায়ী হয়তো সে পানির জন্য আলাদা খরচ দিতে বাধ্য। কিন্তু ইস্তিহসানের ভিত্তিতে ইমাম আবু হানিফা বলেন, এ ক্ষেত্রে পানির খরচ মওকুফ করা উচিত, কারণ এটি সাধারণ প্রয়োজন।
উপসংহার
ইস্তিহসান ইমাম আবু হানিফার ফিকহি পদ্ধতির একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এটি তাঁর চিন্তার নমনীয়তা, মানুষের কল্যাণে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং আইনগত সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে প্রগতিশীলতার পরিচায়ক। ইস্তিহসানের মাধ্যমে তিনি ফিকহের চর্চাকে শুধু তত্ত্বগত নয়, বরং বাস্তব ও উপকারী রূপ দিয়েছেন।